অযৌন জনন প্রক্রিয়া

একাদশ- দ্বাদশ শ্রেণি - জীববিজ্ঞান - জীববিজ্ঞান প্রথম পত্র | NCTB BOOK
2.4k
Summary

অযৌন জনন (Asexual Reproduction) হল পুং ও স্ত্রী গ্যামেটের মিলন ছাড়া জীবের অপতাজীর সৃষ্টি। এটি দুটি প্রধান পদ্ধতিতে ঘটে:

  1. অযৌন স্পোর সৃষ্টির মাধ্যমে: নিম্নশ্রেণির উদ্ভিদে বিভিন্ন ধরনের রেণু বা স্পোর উৎপন্ন হয়, যা অংকুরিত হলে নতুন উদ্ভিদ জন্মায়। উদাহরণস্বরূপ: শাইল, ছত্রাক প্রভৃতি।
  2. দেহ অঙ্গের মাধ্যমে: উদ্ভিদের দেহ অঙ্গের (মূল, কান্ড, পাতা) মাধ্যমে বছরের বীজী জনন সম্পন্ন করা হয়। এটিকে অঙ্গজ জনন বলে।

অঙ্গজ জননের ধরন:

  • স্বাভাবিক অঙ্গজ জনন:
    • খন্ডায়ন: উদ্ভিদ খণ্ডে বিভক্ত হলে নতুন উদ্ভিদ জন্মায়।
    • মুকুলোদহাম: ঈস্টের দেহ থেকে মুকুল উৎপন্ন হয়।
    • কান্ড দ্বারা: পরিবর্তিত কান্ড (যেমন আদা, পেঁয়াজ) নতুন গাছ জন্মায়।
    • মূল দ্বারা: বিভিন্ন গাছের মূল থেকে নতুন গাছ জন্মায়।
    • পাতা দ্বারা: পাথরকুচির পাতা থেকে নতুন চারা গজায়।
  • কৃত্রিম অঙ্গজ জনন: কলম পদ্ধতি ব্যবহার করে। এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত:
    • শাখাকলম: গাছের অংশ কেটে নতুন গাছ উৎপাদন।
    • দাবা কলম: শাখা মাটি চাপা দিয়ে নতুন মূল গঠন।
    • গুটিকলম: শক্ত কাণ্ড যুক্ত গাছের মাধ্যমে কলম করা।
    • জোড়কলম: এক গাছের সঙ্গে অন্য গাছের অংশ জুড়ে নতুন উদ্ভিদ সৃষ্টি।
    • চোখ কলম: একটি গাছের কুঁড়ি অন্য গাছের অংশের সাথে যুক্ত করা।

অযৌন জনন (Asexual reproduction) পুং ও স্ত্রী গ্যামেটের মিলন ছাড়া কোন জীব অপতাজীর সৃষ্টি করলে তাকে অযৌন জনন বলে। দুভাবে এ জনন
ঘটতে পারে- অযৌন স্পোর সৃষ্টির মাধ্যমে এবং দেহ অঙ্গের মাধ্যমে । নিচে এদের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দেয়া হলো ।

১. অযৌন স্পোর সৃষ্টির মাধ্যমে নিচুশ্রেণির বেশকিছু উদ্ভিদে বিভিন্ন ধরনের রেণু বা স্পোর (spore) উৎপন্ন হয়। এসব স্পোর অংকুরিত হলে নতুন উদ্ভিদের জন্ম হয়। সাধারণত শৈবালে অক্সোস্পোর, অ্যাপ্ল্যানোস্পোর, হিপনোস্পোর। জম্পোর প্রকৃতির স্পোর উৎপন্ন করে। ছত্রাক কনিডিয়া, অয়ডিয়া, ক্ল্যামাইডোস্পোর, পিকনিওস্পোর ইত্যাদি স্পোর সৃষ্টি করে।(ব্রায়োফাইটার স্পোর উৎপাদনকারী অঙ্গ হলো ক্যাপসুল এবং টেরিডোফাইটাতে স্পোরাঞ্জিয়ামের অভ্যন্তরে স্পোর তৈরি হয়।

২. দেহ অঙ্গের মাধ্যমে আবৃতবীজী উদ্ভিদের কোন দেহ অঙ্গের (যেমন-মূল, কাণ্ড, পাতা) মাধ্যমেও অযৌন জনন সম্পাদিত হয় । দেহ থেকে বিভিন্ন অংশবিশেষ নতুন জীব সৃষ্টি করে বলে একে অঙ্গজ জনন বলে। প্রকৃতিতে অনেক উদ্ভিদে স্বাভাবিকভাবেই অঙ্গজ বিমান ঘটতে দেখা যায়। তবে কৃত্রিম উপায়েও অঙ্গজ জনন ঘটানো সম্ভব। নিচে বিভিন্ন ধরনের অঙ্গজ প্রজনন আলোচিত হলো।

ক. স্বাভাবিক অঙ্গজ জননঃ নিম্নলিখিত উপানো স্বাভাবিক অঙ্গজ জনন ঘটেতে পারে।

• খন্ডায়ন (Fragmentation) (Spirogyra, Oscillatoria প্রভৃতি নিম্নশ্রেণির উদ্ভিদের সেই কোন কারণে এক বা একাধিক খণ্ডে বিভক্ত হলে প্রায় প্রতিটি বস্তু থেকে নতুন উদ্ভিদ জন্মায়।

• মুকুলোদহাম (Budding) ( ঈস্ট নিজ দেহে একাধিক মুকুল উৎপাদন করে। প্রতিটি মুকুল বিচ্ছিন্ন হয়ে নতুন ঈস্টের জন্ম দেয়।

•  কান্ড দ্বারা (By stems) : পরিবর্তিত মৃদগত কান্ড, যেমন আদার, রাইজোম আলুর টিউবার, পেঁয়াজের বাল্ব থেকে নতুন গাছ জন্মায়। এছাড়া অর্ধবায়বীয় পরিবর্তিত কান্ড কচু,শুষনি,কলমী, থানকুনী এবং বায়বীয় পরিবর্তিত কান্ড (ফনিমনসার পর্ণকান্ড) থেকেও নতুন উদ্ভিদে জন্মে থাকে। কলা, পুদিনা,
আনারস, চন্দ্রমল্লিকা, বাঁশ প্রভৃতি উদ্ভিদে সাকার (বিশেষ কাও)-এর সাহায্যে প্রজনন হয়।

• মূল দ্বারা (By roots): কাঁকরোল,মিষ্টি আলু, রাঙ্গা আলু, ডালিয়া, শতমূলী,পটল প্রভৃতি গাছের মূল থেকে নতুন গাছ জন্মায়।

• পাতা দ্বারা (By leaves) : পাথরকুচি উদ্ভিদের একটি পাতা উর্বর মাটিতে ফেলে রাখলে পাতার কিনারা থেকে বেশ কয়েকটি চারা গজায়।

খ. কৃত্রিম অঙ্গজ জনন : কৃত্রিম পদ্ধতি প্রয়োগ করে ফল ও ফুলের গুণমান বজায় রেখে এ ধরনের জনন ঘটানো হয়। যে পদ্ধতিতে এটি সম্ভব তাঁকে কলম করা বলে। কলম নিম্নবর্ণিত ধরনের হয়ে থাকে।

ক. শাখাকলম (Cuttings) : আখ, জবা, ক্রোটন, গোলাপ, আপেল, কমলালেবু, পাতাবাহার, সজিনা প্রভৃতি গাছের পরিণত কান্তের অংশবিশেষ কেটে ভিজে মাটিতে পুঁতলে তা থেকে নতুন গাছ জন্মায় ।

খ. দাবা কলম (Dayering) : লেবু, যুঁই প্রভৃতি গাছের মাটি সংলগ্ন লম্বা শাখাকে বাঁকিয়ে মাটি চাপা দিলে কয়েক সপ্তাহের মধ্যে মাটির মধ্যে অবস্থিত শাখাটির পর্ব থেকে অস্থানিক মূল নির্গত হয়। মাটি চাপা অংশের ছাল কেটে দিলে। সেখানে দ্রুত মূল গঠিত হয়। মূলসহ শাখাটি কেটে অন্যত্র লাগালে নতুন গাছের জন্ম হয়। উদাহরণ- স্টোরেরী, চন্দ্রমল্লিকা, আপেল, সফেদা

গ. গুটিকলম (Cootec) : শক্ত কাণ্ডযুক্ত যে কোন ফল গাছ, যেমন আম, লেবু, ইত্যাদি বা গন্ধরাজ, গোলাপ! ইত্যাদি ফুলের গাছে গুটিকলম তৈরি করা যায়। গুটিকলমের জন্য নির্বাচিত অংশের ছাল ছাড়িয়ে সেখানে গোবর-মাটি ও খড় দিয়ে ঢেকে শক্ত করে দড়ি বেঁধে দিতে হয়। নিয়মিত পানি দিতে থাকলে ঐ অংশে অস্থানিক মূল গঠিত হয়। মূলসহ শাখাটি বিচ্ছিন্ন করে ভিজে মাটিতে রোপণ করলে অন্যত্র তা থেকে নতুন গাছ জন্মায়। যেমন লেবু, কমলালেবু, বাগান বিলাস ।

ঘ. জোড়কলম (Grafting) : বিভিন্ন ফল ও ফুলগাছের উন্নত মান অপত্য বংশধরের মধ্যে বজায় রাখার জন্য জোড়কলম তৈরি করা হয়। কাংখিত বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন নির্বাচিত গাছের কোন শাখা বাঁকিয়ে অথবা মুকুলসহ একটি শাখাকে বিচ্ছিন্ন করে মাটিতে বা টবে লাগানো অন্য একটি গাছের সঙ্গে জুড়ে দিতে হয়। এ অংশটিকে সিয়ন বলে। জোড়কলম সিয়নকে যে গাছের সঙ্গে জোড়া হয় তাকে স্টক (stock) বলে । স্টক যেকোন নিম্নমানের গাছ হতে পারে (সিয়নকে লালন করাই স্টকের কাজ । লক্ষণীয় নিয়ন সাধারণত উচ্চমানের গাছের অংশ হয়ে থাকে। সুতরাং ফল বা ফুলের চরিত্র নির্ভর করে সিয়নের উপরে স্টকের উপরে নয়। উদাহরণ- আম, জাম, লিচু, পেয়ারা, কুল, চাঁপা, ম্যাগনোলিয়া ইত্যাদি। জোড় কলম


ঙ. চোখ কলম (Budding) বা কুঁড়ি সংযোজন : কাংখিত ফলনযুক্ত গাছের চোখ বা কুঁড়িকে একই প্রজাতির অন্য একটি উদ্ভিদের সমব্যাসযুক্ত ডালের কোন স্থান ছেঁচে খাঁজ অনুযায়ী স্থাপন করলে কিছুদিন পর কাংখিত অংশ হতে মুকুল গজিয়ে ঐ ডাল কাংখিত গুণসম্পন্ন ফল দেবে পেড়ইগাছে সচরাচর এ ধরনের চোখ কলম করা হয়।

Content added By
Promotion
NEW SATT AI এখন আপনাকে সাহায্য করতে পারে।

Are you sure to start over?

Loading...